গেল ডিসেম্বরের শেষ দিনে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৫৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ৬৫ হাজার ৬০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করেছিল ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, সার, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ব্যয় বেড়েছে। আবার দেশের বাজারেও বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীসহ অন্যান্য খাতের পণ্যের দাম। এতে সরকারের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় বেড়েছে; কিন্তু আশানুরূপ রাজস্ব আয় না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি বড় হচ্ছে। আর ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতদিন সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে জনসাধারণ থেকে বেশি ঋণ নিত। এখন সঞ্চয়পত্র বেচাকেনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে এ খাতে জনসাধারণের বিনিয়োগ কমেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সরকারকে ব্যাংকমুখী না হয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডলার বিক্রি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রচুর টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এসব ব্যাংকে আবার জোর করে ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনার চাপ দেওয়া হলে বাজারে টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। আর ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কম হওয়ায় বাণ্যিজিক ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাই সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ না বেড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ এবং দায় সবসময় সমান থাকে। সরকার যে ট্রেজারি বিল-বন্ড দিচ্ছে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে এর বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা ইস্যু করা হচ্ছে। এর ফলে বাজারে নতুন টাকা ঢুকলেও যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে, তাই এর বিপরীতে সরকারের ঋণের মাধ্যমে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে নতুন সরবরাহ করা হয়েছে। সেই হিসাবে বাজারে নতুন টাকার সরবরাহ বাড়লেও টাকার প্রবাহ কমেছে। ফলে এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলেও মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা নেই। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার বিক্রি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে টাকা না তুলত, তাহলে সরকারের এই ট্রেজারি বিল ও বন্ডগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই কিনে নিত। তখন সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতো না।
ট্রেডার বাংলাদেশ, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩