বাইনান্স ট্রেডিং এখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। তাদের প্রতিদিনের ট্রেডিং ভলিউম হিসাব করলে বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে বড় ক্রিপ্টো কারেন্সি একচেঞ্জ গুলোর মধ্যে অন্যতম বাইনান্স। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উক্ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি কিমান আইল্যান্ডে অবস্থিত। আজ আমরা জানবো কিভাবে বাইন্যান্সে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কিভাবে ট্রেড করা যায়।
বাইনান্স ট্রেডিং শুরু করতে হলে সর্বপ্রথম একটি একাউন্ট থাকতে হবে আপনার। একাউন্ট তৈরি করার জন্য বাইনান্স এর ওয়েবসাইটে যেতে হবে। স্ক্রিনশটে দেখানো তথ্যমতে ক্রিয়েট একাউন্ট অপশন থেকে আপনার তথ্য দিয়ে একাউন্ট তৈরি করে নিন। একাউন্ট করা হয়ে গেলে লগইন অপশন এ গিয়ে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করুন।

এরপর আপনি বাইন্যান্স ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করবেন। যেটা দেখতে নিচের এই স্ক্রীনশটএর মত। লাল চিহ্ন দিয়ে দেখানো হচ্ছে মার্কেট অপশন। এখান থেকে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারবেন। হলুদ চিহ্ন দিয়ে তিনটি অপশন দেখানো হচ্ছে একটি হচ্ছে ওয়ালেট দ্বিতীয় টি অর্ডারস আর তৃতীয়টি প্রোফাইল। প্রোফাইল নামক অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনি সেটিং এ যেতে পারবেন। সেখানে আপনার একাউন্টে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যাতে আপনার একাউন্ট নিরাপদে থাকে।

টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনঃ
স্ক্রিনশটে দেখানো তথ্যমতে সিকিউরিটি অপশন থেকে উক্ত অপশন গুলো একে একে চালু করে দিন। প্রথম এখানে দেখতে পাবেন সিকিউরিটি কী। এটি চালু করার পর আপনি একটি কোড নাম্বার পাবেন এটি সযত্নে রেখে দিন। ভবিষ্যতে আপনার একাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজে এই কোডটি ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর দেখতে পাচ্ছেন বাইনান্স বা গুগোল অথেন্টিকেটর এই অপশনটি চালু করলে আপনার একাউন্ট এবং ট্রানজেকশন গুলো নিরাপদ হবে। বাইনান্স এ অপশনটি চালু করার জন্য আপনাকে রিকমান্ড করবে। ৩ নাম্বার অপশন দেখতে পাবেন আপনার ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন এখান থেকে আপনি আপনার ফোন নাম্বারটি ভেরিফিকেশন করে নিন। ৪ নাম্বারে রয়েছে ইমেইল অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন এখান থেকে আপনার ইমেইল এড্রেস ভেরিফাই করে নিন। এগুলো করার ফলে আপনার একাউন্টে সর্বোচ্চ নিরাপদ অবস্থায় থাকবে।

অ্যাডভান্স সিকিউরিটিঃ
অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে আপনার অ্যাডভান্স সিকিউরিটি অপশন থেকে Anti-phishing কোড অপশনটি চালু করে দিন। এর ফলে কখনো যদি আপনার একাউন্ট কেউ বিপদে ফেলতে চায় তাহলে সেটি বাধাগ্রস্ত হবে।
ডিভাইস এন্ড এক্টিভিটিসঃ
ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট অপশন থেকে আপনি ডিভাইস নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। অর্থাৎ যে সকল ডিভাইস থেকে আপনার উক্ত একাউন্টে লগইন করা হয়েছে আপনি চাইলে সেগুলো চালু অথবা বন্ধ করতে পারবেন। এছাড়াও নতুন কোন ডিভাইসে আপনার উক্ত একাউন্টে লগইন করতে গেলে ইমেইলে ডিভাইস আপ্রুভালের জন্য একটি ইমেইল আসবে সেখানে আপনাকে জানানো হবে উক্ত ডিভাইসটিতে আপনি অ্যাকাউন্ট লগইন করেছেন কিনা বা করতে চান কিনা ।
এরপরের অপশন অর্থাৎ ৭ নাম্বারে দেখতে পারছেন একাউন্ট অ্যাক্টিভিটি। এখান থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন এর হিস্টরি গুলো দেখতে পারবেন। অর্থাৎ সেই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত কোথায় কত তারিখে কোন সময় আপনার একাউন্টে লগইন করা হয়েছে তার সবকিছুই এখানে পেয়ে যাবেন
পার্সোনাল ভেরিফিকেশনঃ
পার্সোনাল ভেরিফিকেশন হচ্ছে বাইন্যান্সে আপনার তথ্য দিয়ে একাউন্টে লাইফটাইম ভেরিফাই করে নেওয়া। এতে কখনো আপনার একাউন্ট সিকিউরিটি চেকিং এ পড়বে না। প্রোফাইল অপশন থেকে আপনি পার্সোনাল ভেরিফিকেশন অপশন পেয়ে যাবেন। পার্সোনাল ভেরিফিকেশন অপশনে দুইটি লিমিট রয়েছে। একটি বেসিক অপরটি ইন্টারমিডিয়েট।

১) বেসিকঃ
এখানে শুধুমাত্র আপনার নিজের কিছু তথ্য দিয়ে একাউন্টে খুব তাড়াতাড়ি এবং সহজভাবে ভেরিফাই করে নিতে পারবেন। কিন্তু এখানে কিছুর লিমিট রয়েছে যেমন আপনি ক্রিপ্টো ডিপোজিট করতে পারবেন আনলিমিটেড কিন্তু ক্রিপ্ত প্রতিদিন উড্রো করতে পারবেন মাত্র দুই বিটকয়েন সমপরিমাণের।
২) ইন্টারমিডিয়েটঃ
এটা খুবই জনপ্রিয় একটি ভেরিফিকেশন মাধ্যম বাইন্যান্স এর। এখানে ভেরিফাই করতে হলে আপনাকে যা প্রদান করতে হবে তা হল আপনার সব বেসিক ইনফর্মেশন। সরকারি ইস্যু করা আইডি কার্ড, এবং আপনার চেহারা সনাক্ত করার জন্য সেলফি। একের পরে এক অপশনে আপনি এখানে ভেরিফাই করতে গেলে পেয়ে যাবেন। সেগুলো সম্পূর্ন করলে আপনার পূর্ববর্তী লিমিট গুলো কমে যাবে যেমন এখানে আপনি ফিয়াট এন্ড উড্রয়াল প্রতিদিন 50 হাজার সমপরিমান অর্থ ইনপুট-আউটপুট করতে পারবেন। মাসে প্রায় ৫ লাখ সমপরিমাণ অর্থ ইনপুট-আউটপুট করতে পারবেন। P2P ট্রানজেকশন আনলিমিটেড এখানে। প্রতিদিন আপনি ১০০ টিরও বেশি বিটকয়েন উইথড্র করতে পারবেন। এছাড়াও এলপিডি, ওটিসি,বাইন্যান্স কার্ড এ সমস্ত ফিচারস গুলো চালু হয়ে যাবে।
ফিয়াট এন্ড স্পটঃ

ওয়ালেট অপশনে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন ফিয়াট এন্ড স্পট নামে একটি অপশন রয়েছে। যেখানে আপনি ডিপোজিট এবং উইথড্র করতে পারবেন এখন আমরা এই অপশনটি নিয়ে আলোচনা করব।
স্ক্রিনশটে লাল চিহ্ন বসে দেখতে পারছেন এখানে আপনার ফিয়াট এন্ড স্পট ব্যালেন্স দেখাচ্ছে।

দ্বিতীয় নাম্বার বক্সে আমরা যেকোন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বাছাই করেছি যেমন ইথারিয়াম। আপনার একাউন্টে যদি ইথেরিয়াম থাকে তাহলে টোটাল বা মোট কতগুলো ইথারিয়াম আছে সেটা টোটাল অপশন এ দেখাবে। এছাড়াও আপনার ইন অর্ডার এ কতগুলো ইথিরিয়াম আছে তা দেখাবে। ইথারিয়াম এর বর্তমান বিট কয়েন মার্কেট ভ্যালু কত তা বিটিসি ভ্যালু তে দেখাবে।
৩ নাম্বার অপশন এ দেখতে পারছেন এখানে যথাক্রমে বায়, ডিপোজিট, উইথড্র ইত্যাদি অপশন গুলো রয়েছে। আমরা এখানে শুধু মাত্র তিনটি অপশন নিয়ে আলোচনা করব এবং এগুলো কিভাবে করতে হয় তা দেখাবো। যেমন প্রথমে ডিপোজিট।
বাইন্যান্সে ডিপোজিট যেভাবে করবেনঃ
জেনে রাখা ভালো বাইন্যান্সে ট্রেড করতে হলে সর্বনিম্ন 10 ডলার এর মধ্যে করতে হবে। তিন নাম্বার বক্সে ডিপোজিট অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনি নিচে উল্লেখিত এমন একটি পেইজ দেখতে পাবেন।

প্রথম বক্সে আপনি কোন পয়েন্টে ডিপোজিট করতে চাচ্ছেন সেটি বাছাই করুন। যদি আপনি বিটকয়েন ডিপোজিট করতে চান তাহলে বিটকয়েন অপশন টি বাছাই করুন আর যদি ইউএসডিটি ডিপোজিট করতে চান তাহলে ইউএসডিটি অপশনটি বাছাই করুন। এরপর আপনি দ্বিতীয় নাম্বার বক্সটিতে কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি উক্ত ডিপোজিট করতে চাচ্ছেন সেটি বাছাই করুন। যদি বিটকয়েন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিপোজিট করতে চান তাহলে বিটকয়েন নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করুন। আর যদি ইথারিয়াম নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ডিপোজিট করতে চান তাহলে ইথারিয়াম নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করুন। এরপর ৩ নাম্বার অপশন এ একটি এড্রেস দেওয়া থাকবে। এটা হচ্ছে পাবলিক অ্যাক্ট্রেস আপনি উক্ত এড্রেসটিতে আপনার ওয়ালেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠাবেন বা ডিপোজিট করবেন। উক্ত ডিপোজিট টি কমপ্লিট হতে বারোটি নেটওয়ার্ক কনফার্মেশন এর প্রয়োজন হবে। আর এতে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মত সময় লাগতে পারেন। ৩০ মিনিট পর অর্থাৎ ৪ নাম্বার অপশনটিতে রিসেন্ট ডিপোজিট এ আপনার পাঠানো অ্যামাউন্টি দেখাবে। এখানে যখন আপনার ডিপোজিট শো করবে বা দেখাবে তখন বুঝে নিবেন আপনার ডিপোজিট টি সম্পূর্ণ হয়েছে। বা চাইলে ওয়ালেট অপশন থেকেও তা আপানার ব্যালান্স দেখতে পারবেন।
এবার আমরা আলোচনা করব ট্রেড নিয়ে।
বাইন্যান্সে ট্রেডিং যেভাবে করবেনঃ
ট্রেড অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি এরকম একটি পেজে চলে আসবেন।

এখানে প্রথম বক্সে দেখতে পারছেন মার্কেটে বর্তমানে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে সেগুলো এখানে দেখাচ্ছে। দ্বিতীয় নাম্বার অপশনটি অর্থাৎ ফেভারিট এখানে আপনি চাইলে আপনার ফেভারিট যে ক্রিপ্টোকারেন্সি তে ট্রেড করবেন বলে পছন্দ করেছেন সেটি সেভ করে রাখতে পারবেন। দ্বিতীয় নাম্বারে ক্লিক করলে অর্থাৎ স্পট মার্কেটে এখানে অনেকগুলো মার্কেট এর অপশন পাবেন যেমন বিএনবি মার্কেট, বিটিসি মার্কেট, এলটিসি মার্কেট ইত্যাদি। আমি যেহেতু বিটিসি মার্কেটে ট্রেড করতে চাচ্ছি তাহলে আমি বিটিসি মার্কেট অপশনটি বাছাই করব। এবার এখানে আপনি বিটিসি সাথে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি তে ট্রেড করতে চাচ্ছেন সেটি বাছাই করুন যেমন আমি চার নাম্বার অপশনে ইথারিয়াম এবং বিটিসি বাছাই করেছি এবং ট্রেড অপশনে ক্লিক করার পর এরকম একটি পেজে চলে আসলাম।
বাইনান্স এ ইথারিয়াম/বিটকয়েন ট্রেডঃ

এক নাম্বার অপশনে দেখতে পাচ্ছেন ইথারিয়াম এবং বিটকয়েন মার্কেট ভ্যালু বর্তমানে কি অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতীয় নাম্বার অপশন অর্থাৎ চার্ট। চার্ট এনালাইসিস ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি এর চার্ট এনালাইসিস করতে পারেন তাহলে এখান থেকে ভাল ফলাফল পাবেন। ২ নাম্বার অপশন থেকে দেখাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে ইথারিয়াম এবং বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু কতটা আফ ডাউন হয়েছে। যেমন আমি গত একদিনের ইথিরিয়ামে বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু যদি দেখি তাহলে এখানে দেখাচ্ছে কি পরিমাণ মার্কেট ভ্যালু বেড়ে গিয়েছে। ৩ নাম্বার অপশন টি অর্থাৎ অর্ডার বুক এখান থেকে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্ডার বুক করতে পারবেন। যে পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি আপনি অর্ডার করবেন সেটি ৬ নাম্বার অপশনটি অর্থাৎ ওপেন অর্ডার এ দেখাবে। এখানে আপনি যথাক্রমে আপনার অর্ডার হিসটোরি ট্রেড হিসটোরি ইত্যাদি তথ্য গুলো দেখতে পারবেন। ৪ নাম্বার অপশন থেকে আপনি চাইলে যেকোন মুহূর্তে উক্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো নিতে এবং ছাড়তে পারবেন। এখানে একটা অপশন রয়েছে লিমিট অর্থাৎ আপনার যদি মনে হয় বিটকয়েন আজকে অনেক নিচে নেমে যাবে তাহলে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে লিমিট দিয়ে রাখতে পারবেন। যখন বিটকয়েন উক্ত লিমিট টিতে আসবে তখন অটোমেটিক ভাবে আপনার বিটকয়েন টা আপনার মূল ব্যালেন্সে সংযুক্ত হয়ে যাবে। এতে আপনার লস হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ৫ নাম্বার অপশনে দেখাচ্ছে ট্রেড ভ্যালু। এখানে আপনি বিটকয়েনের প্রাইস কি পরিমান উঠানামা করছে সেটির তথ্য দেখতে পারবেন সাথে একটি ইথারিয়াম এর ভ্যালু কত তাও দেখতে পাবেন সময় সহ।
বাইন্যান্স থেকে যেভাবে উইথড্রো দিবেনঃ

স্ক্রিনশটে দেখতে পাচ্ছেন উইথড্র পেজ এটি আপনি ওয়ালেট অপশন থেকে পেয়ে যাবেন। এক নাম্বার বক্সে আপনি কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি টি উইথড্র দিতে চাচ্ছেন সেটি বাছাই করুন। দ্বিতীয় নাম্বার অপশনটাতে আপনি যে একাউন্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি টি নিতে চাচ্ছেন সেটির অ্যাড্রেস বসান। ৩ নাম্বার অপশন এর নেটওয়ার্ক বাছাই করুন অর্থাৎ আপনি কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উক্ত ট্রানজেকশন টি সম্পন্ন করতে চাচ্ছেন সেটি। সকল তথ্য সঠিকভাবে বসানোর পর নির্দিষ্ট সময় পর আপনার একাউন্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি পৌঁছে যাবে। আর সেটা ৪ নাম্বার অপশন অর্থাৎ রিসেন্ট উইথড্রয়ালস এ দেখাবে।