পুঁজিবাজারের বিশেষ ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ কম তফসিলি ব্যাংকগুলোর

0
300
HTML tutorial

পুঁজিবাজারের বিশেষ ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ কম দেখা ব্যাংকগুলো। ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার, এখন বিনিয়োগ করলেই রিটার্ন। তবুও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয় তফসিলি ব্যাংকগুলো। ফলে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট কাটাতে সরকার গঠিত বিশেষ তহবিল এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ স্টক এখন অতিমূল্যায়িত। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পুঁজিবাজার এখন পর্যবেক্ষণ করছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, দরপতনে তলানিতে থাকা পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনে নির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়া হয়। নির্দেশনার দেড় বছর পর অর্থাৎ গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক মাত্র ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, শতাংশের হিসেবে ৪৭ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে।

অথচ ২০২০ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আলাদা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক তা পালন করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করলে ব্যাংকগুলোর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের তহবিল গঠনের সুযোগ হয়। শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক সেই কোটাও পূরণ করছে না।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, ওয়ান, ইউসিবি, এনসিসিবিএল, ইসলামী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়াও এক্সিম, সিটি, রূপালী, পূবালীসহ ২৭ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুসারে আমাদের (ইবিএল) ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। সব তফসিলি ব্যাংক তো আর এই তহবিলের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেসব ব্যাংক এই তহবিলের আওতাভুক্ত রয়েছে, সেগুলো আস্তে আস্তে বিনিয়োগ করছে। তবে কী কারণে পুরোপুরি বিনিয়োগের আসছে না তা বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, একবারে আসার চেয়ে পর্যায়ক্রমে ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ বাড়ালে বাজারে লেনদেনও বাড়বে। তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। বাজার স্থিতিশীল হবে। এটাও পজিটিভ দিক।

নাম না প্রকাশের শর্তে এবি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি প্রতিনিয়তই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দিতে হচ্ছে। তাই বাড়তি ঝামেলা এড়াতে পুঁজিবাজারের বিশেষে ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়নি।
তিনি বলেন, এখন পুঁজিবাজার সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি নতুন করে বিনিয়োগে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের মৌখিক নির্দেশনাও দিয়েছে ঝুঁকিমুক্তভাবে বিনিয়োগ করতে। অপর দিকে ব্যাংক থেকে অলস টাকা তুলে নিতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারের বিশেষ ফান্ডে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম। তবে গত দু-তিন মাসে বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। আরও যাতে বিনিয়োগ বাড়ে সে জন্য ব্যাংকগুলোর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেসব ব্যাংক প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), রাইট শেয়ার এবং বন্ড অনুমোদনের জন্য কমিশনে আবেদন করছে তাদের প্রথমে ২০০ কোটি টাকার ফান্ডে বিনিয়োগ করে আসার শর্ত দিচ্ছি। যারাই এই শর্তপূরণ করছে তাদের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামীতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। বিশেষ ফান্ডের বিনিয়োগের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ সীমা অনুসারে সকল ব্যাংকে বিনিয়োগের বিষয়টিও তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত এক বছরে দেশের পুঁজিবাজারে সূচক ৩ হাজার পয়েন্ট থেকে সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন ৩শ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে বাজার মূলধন অর্থাৎ মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা দেশের পুঁজিবাজারে নতুন মাইলফলক।

HTML tutorial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here