পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন না নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন না নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে নেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএমবিএ।
বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা লেনদেনের তথ্য দিতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রতিদিনের ডাটা প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব না। এটা এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা যায় না। তাই আমরা মাসিক ভিত্তিতে তথ্য নেওয়ার প্রস্তাব করেছি।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের পুঁজিবাজার গ্রোয়িং মুডে আছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন দেওয়ার নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পুঁজিবাজারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে আলোচনা করা উচিত।
গভর্ণরের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, প্রতিদিনের লেনদেনের ডাটা সঠিকভাবে বিকেল পাঁচটার মধ্যে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। প্রতিদিন লেনদেন শেষ হয় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে। এর এক ঘণ্টা পর স্টক এক্সচেঞ্জগুলো লেনদেনের ডাটা তৈরি করে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে পাঠায়। এরপর ব্রোকার হাউসগুলো তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রাহকদের কাছে পাঠায়। এরপর প্রকৃত তথ্যের ডাটা তৈরি করতে ৫টা থেকে ৬টা বাজে।
তাই আমরা মনে করি, দৈনিক ভিত্তিতে ডাটা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এমতাবস্থায় দৈনিকের পরিবর্তে মাসিক ভিত্তিতে লেনদেনের তথ্য নিলে কোনো প্রকার জটিলতা কিংবা আতঙ্ক হবে না। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়েছে। তাতে প্রতিদিন ব্যাংকগুলো কোথায় কী পরিমাণ বিনিয়োগ করছে তা বিকেল ৫টার মধ্যে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার স্তূপ বাড়ছে। বিনিয়োগের জায়গা পাচ্ছে না। ফলে নানা অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ারবাজারসহ অনুৎপাদনশীল খাতে টাকা চলে যাচ্ছে। বিষয়টি তদারকি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে গত বছর প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজের বেশিরভাগ ছিল স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করছে এ প্রণোদনার ঋণ। যার অর্ধেক সুদ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
কর্মকর্তারা আরও জানান, কিন্তু কিছু গ্রাহক স্বল্প সুদের এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার না করে শেয়ারবাজারসহ নানা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছে। নিজস্ব তদারকি ব্যবস্থায় এমন অনিয়মের প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবগুলো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে এ সতর্কতা জারি করা হয়। চিঠিতে প্রণোদনা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে।