নতুন ৬টি জাহাজ কিনছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে গঠিত একাধিক কমিটি কারিগরি ও বাণিজ্যিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছে।
বিএসসির কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি সমৃদ্ধ জাহাজের বহর গড়ে তুলতে চায় শিপিং করপোরেশন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৬টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে। বিএসসির পরিচালনা বোর্ডে অনুমোদনের ভিত্তিতে নতুন ৬ জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, নতুন ৬ জাহাজের মধ্যে রয়েছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি মাদার ট্যাংকার, ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার।
তিনি বলেন, ‘বিএসসি নতুন ৬টি জাহাজ কেনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসবে আগামী ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার। জাহাজগুলো জিটুজি পদ্ধতিতে কোনো বিদেশি সরকার বা অন্য কোনো দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী কেনা সমীচীন হবে কিনা সে ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
‘এ ছাড়া টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে জাহাজ ক্রয়ের প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণ করা হবে, যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে।’ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ৯ জনকে সদস্য করে এ প্রকল্পের নেগোসিয়েশন কার্যক্রম শেষ করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবারের সভায় কমিটির ৯ সদস্যের মধ্যে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সদস্য হিসেবে আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিনিধি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি। এ ছাড়া অন্য অসদস্যের মধ্যে আছেন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন),
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা)। নতুন ৬টি জাহাজের মধ্যে থাকবে ২টি ক্রুড ওয়েল মাদার ট্যাংকার, যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা হবে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টন। দেশের জ্বালানি চাহিদার সঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ক্রুড অয়েল পরিশোধন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা অনুযায়ী ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য নতুন এ দুটি মাদার ট্যাংকার কেনা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লক্ষ টন ডিজেল অয়েল ও প্রায় ৩ লক্ষ টন জেট ফুয়েল আমদানি করে, যা বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির দুটি ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্প সমাপ্ত হলে কমপক্ষে ৮০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার কিনবে।
অন্যদিকে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করা হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লা পরিবহনের ‘আনইনটেরাপটেড সাপ্লাই চেইন’ গড়ে তোলার জন্য কমপক্ষে ৮০ হাজার টনের ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার কার্যক্রম চলছে।
আশির দশকের প্রথমদিকে বিএসসির বহরে একসঙ্গে সর্বমোট ২৮টি জাহাজ ছিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সে সংখ্যা বাড়িয়ে বিএসসিতে মোট ৪৪টি জাহাজ যুক্ত করা হয়। পরে বয়সজনিত কারণে ও বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রি করার পর বর্তমানে করপোরেশনে জাহাজের সংখ্যা মাত্র ৮টি।
যার মধ্যে ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই, ১০ অক্টোবর ও ৩০ ডিসেম্বর। এ ছাড়া ৩টি প্রোডাক্ট ওয়েল ট্যাংকার যুক্ত হয় ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি, ১ মার্চ ও ২৫ মে । এরপর আর নতুন কোনো জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়নি। তবে নতুন চলমান প্রকল্পে ৬টি জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির মোট জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪টিতে।