শেয়ার বিক্রির হিড়িক বীমা খাতের পরিচালকদের

0
677
HTML tutorial

বীমা খাতের পরিচালকদের গত ১ মাস ধরে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ছে। ফলে ধারাবাহিক কমছে বীমা খাতের শেয়ারের দর। গত এক মাসে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে। এমন উদ্যোক্তা পরিচালকও আছেন, যিনি তার হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনও আছেন, যিনি হাতে থাকা বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সব মিলিয়ে চলতি বছর বিমা খাতের উদ্যোক্তা পরিচালকরা মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে সিংহভাগ এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আর বাকিগুলো বিক্রি করার ঘোষণা এখনও বলবৎ আছে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করতে হলে আগাম ঘোষণা দিতে হয়।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানির সংখ্যা ৫১টি। এর মধ্যে পাঁচটির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশের বেশি ধারণ করে আছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি কোম্পানির ৬০ লাখের বেশি শেয়ার কিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হিস্যা ৬০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এটি হলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। গত জুন থেকে এই খাতে যে দর সংশোধন শুরু হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে, এই কোম্পানির শেয়ার দরে পতন হয়নি, উল্টো বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

এদিকে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দুই উদ্যোক্তা মো. জামাল উদ্দিন ও জোবাইদা আলম নিজেদের কাছে থাকা পুরো শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন । ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তারা এ শেয়ার বিক্রি করবেন। ঘোষণা অনুসারে, মো. জামাল উদ্দিন তার কাছে থাকা মেঘনা লাইফের ৭১ হাজার ৫১২টি শেয়ার ও জোবাইদা আলম ৫৯ হাজার ৮১৪টি শেয়ার পাবলিক মার্কেটে বিদ্যমান দরে বিক্রি করবেন।

সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা রওশন আরার কাছে কোম্পানির ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১০টি শেয়ার রয়েছে। তিনি সব শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ উদ্যোক্তা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইর মূল মার্কেটে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করতে পারবেন।

ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের তিন পরিচালক ২৮ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। জানা গেছে, উদ্যোক্তা পরিচালক মিস উম্মে কুলসুম মান্নানের কাছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯টি শেয়ার রয়েছে। সেখান থেকে তিনি ৫ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার বিক্রি করবেন। এছাড়া, করপোরেট পরিচালক সানম্যান সোয়েটার্সের কাছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪৯টি শেয়ার রয়েছে। সেখান থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হবে। আর উদ্যোক্তা পরিচালক মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের কাছে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬৭টি শেয়ার রয়েছে। সেখান থেকে তিনি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার বিক্রি করবেন।

এছাড়া সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা আলহাজ্ব মো. সাফি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা আলহাজ্ব মো. সাফি নিজ প্রতিষ্ঠানের মোট ১ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বর্তমান বাজার দরে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তিনি এ শেয়ার বিক্রয় করবেন।

চলতি বছরের শুরুতে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর পক্ষ থেকে ২০১০ সালের একটি চিঠি নতুন করে সব কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়। তখনই শুরু হয় হইচই। বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের আইন বাস্তবায়নে শেয়ার কিনতে হবে, এমন খবরে হুহু করে বাড়তে থাকে শেয়ারের দর। কিন্তু চলতি বছর দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এসেছে।

উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, ১১ বছর আগে করা এমন একটি বিধান বারবার প্রচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাই থেকে বিমা খাতের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়লেও ঘটছে উল্টো ঘটনা।  বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ একাধিকবার সেই বিধানের বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। জানানো হয়েছে, বাজার থেকে শেয়ার কিনতে কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এমনও বলা হয়েছে, একাধিক উদ্যোক্তা-পরিচালককে শেয়ার বিক্রি করতে দেয়া হয়নি।

বিমার উদ্যোক্তা-পরিচালকদেরকে কোম্পানির শেয়ারের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ধারণে ১০ বছর আগের একটি সিদান্ত নতুন করে সামনে এনে গত জানুয়ারিতে চিঠি দেয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এরপর বিমা খাতের শেয়ারদর বাড়ে ব্যাপক হারে। গত ২০ জুনও আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম মোশাররফ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

সেদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি বলেন, ‘তাদের (উদ্যোক্তা-পরিচালকরা) পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে হবে। এ জন্য হঠাৎ করে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। তবে যেহেতু এটি আইনগত বিষয়, তাই জটিলতা থাকলেও আইগনত বিষয়টিকেই আমরা গুরুত্ব দেব।’ কিন্তু আইডিআরএ কী উদ্যোগ নিয়েছে সেটি স্পষ্ট নয়। বরং এখন বলা হচ্ছে, করোনা মহামারিতে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভালো না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা শিথিলতা দেখানো হচ্ছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আক্তার বলেন, `আইনের বিষয়টি সব কোম্পানিকেই জানানো আছে। তবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, করোনা মহামরি-পরবর্তী অবস্থায় বিষয়টি শিথিল অবস্থায় আছে। তবে আইনে যেহেতু আছে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তবে করোনায় কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হয়েছে এমন নয়। বরং চলতি বছর সিংহভাগ বিমা কোম্পানির আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আর কোম্পানির ব্যবসা বাড়া বা কমার সঙ্গে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের কী সম্পর্ক, সেটি নিয়েও আছে প্রশ্ন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘আইন থাকলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা উচিত। সময় দেয়া যায়, কিন্তু সেই সময়েরও নির্দিষ্ট সময় থাকা উচিত।’ ‘আইডিআরএর সে সময় চিঠি দেয়ার পর প্রায় সব বিমা কোম্পানির শেয়ার দর ঢালাওভাবে বেড়েছে। অনেক বিমা কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হয়েছে। মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা এই খাতে একচেটিয়ে বিনিয়োগ করেছেন।

এখন মূল্য সংশোধন হচ্ছে সত্য, কিন্তু বেশি দরে যারা শেয়ার কিনেছেন তারা এখন লোকসানে। এই দায়িত্ব কে নেবে? কোম্পানিগুলোকে শেয়ার কেনার জন্য অনেক সময় দেয়া হয়েছে, এখন নতুন করে শিথিলতার বিষয়টি কতটা যৌক্তিক, সেটিও বিবেচনা করা উচিত।

HTML tutorial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here