বেক্সিমকোর সুকুকে ৫৬% আবেদন

0
255
HTML tutorial

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের সুকুক বন্ড কেনার জন্য ৫৬.২ শতাংশ আবেদন জমা পড়েছে। আর এর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বেক্সিমকো লিমিটেডের সুকুক বন্ড। আইন অনুযায়ী চাহিদার বিপরীতে ৫০ শতাংশের অধিক সাবক্রিপশন ফি জমা হলে তা আর বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই।

বেক্সিমকো লিমিটেডের সুকুক বন্ডে ৪২০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩৬০ কোটি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৬০ কোটি টাকা। ফলে ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৪২০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে। আইন অনুযায়ী কোন ইস্যু সাইজের ৫০ শতাংশ আবেদন জমা পড়লে, সেই ইস্যু আর বাতিল হয় না। ফলে আইনত আলোর মুখ দেখতে বাঁধা নেই বেক্সিমকো সুকুকের।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিটি ক্যাপিটাল রিসোর্সেস এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শিবলী আরমান বলেন, দেশের ইতিহাসে বেসরকারি খাতে প্রথম সুকুক বন্ড হলো বেক্সিমকোর। সকল সংঙ্কা কাটিয়ে ভালোভাবে শেষ হয়েছে আইপিওর’ আবেদন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৪২০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে। এর বাহিরে আন্ডার রাইটারদের একটি অংশের টাকা জমা দিতে হবে। সব মিলিয়ে ভালোভাবে শেষ হলো বেক্সিমকোর সুকুক।

প্রসঙ্গত: বেক্সিমকো লিমিটেডের তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু হয়। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল ২৩ আগস্টের বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ে বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা মাত্র ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪১৫ শতাংশ আবেদন করেন। এতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন।

প্রথম দফায় চাহিদার অনুসারে আবেদন জমা না পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের সময় আরও ১০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়। কিন্তু বাড়তি ১০ কার্যদিবসে আইপিও আবেদনে তেমন পরিবর্তন হয়নি। এ সময় মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার বন্ড কেনার আবেদন জানান। এতে করে আবেদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা মোট চাহিদার মাত্র ৭ দশমিক ৪২৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে ঘাটতি দাঁড়ায় ৬৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার।

৩ হাজার কোটি টাকার বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটির মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার বাদে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। অবশিষ্ট ৭৫০ কোটি টাকা আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।

গত ২৩ জুন শর্তসাপেক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকার সুরক্ষিত রূপান্তরযোগ্য অথবা অবসায়নযোগ্য সম্পদভিত্তিক গ্রিণ সুকুক বন্ডটির অনুমোদন দেয় এসইসি। বন্ডটির নাম হচ্ছে বেক্সিমকো সুকুক আল ইস্তিসনা, অর্থাৎ এর মাধ্যমে অর্থায়নকারীর অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এবং বাস্তবায়ন শেষে তার মালিকানা হবে অর্থায়নকারীদের। প্রস্তাবিত বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বন্ডটির অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা ও ৫০টি বন্ডে একটি লট। মুনাফার ভিত্তি হবে ন্যূনতম ৯ শতাংশ বা সর্বশেষ বছরে প্রদত্ত লভ্যাংশের সঙ্গে মুনাফার পার্থক্যের ১০ শতাংশ বেশি।

বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটি শতভাগ শেয়ারে রূপান্তরের সুবিধা রয়েছে। অবশ্য কোনো বন্ডধারী চাইলে রূপান্তর নাও করতে পারেন। বন্ডধারী চাইলে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে আংশিক বা পুরো বন্ড বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রূপান্তর মূল্য হবে ডিএসইর ২০ কার্যদিবসের ভারিত গড়ের ৭৫ শতাংশ। সুকুক বন্ডটি দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হবে। এসইসির অনুমোদনসাপেক্ষে বন্ড ইস্যুর জন্য একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকল গঠন করেছে বেক্সিমকো।

বেক্সিমকো জানিয়েছে, বন্ডের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হবে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে। তিস্তা সোলার চীনা কোম্পানি টিবিইএ সানোয়াসিসের সঙ্গে যৌথভাবে গাইবান্ধায় ২০০ মেগাওয়াট এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অপর এক চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজির সঙ্গে যৌথভাবে করোতোয়া সোলার নামের ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সুকুক বন্ডের অর্থ খরচ করা হবে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে ১ হাজার একর জমির ওপর তিস্তা সোলারে নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটিই দেশে এ ধরনের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তিস্তা সোলারের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় ও বাস্তবায়ন চুক্তি হয়েছে।

অন্যদিকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশের মালিক। বাকি ২০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি জুয়াংসু জংতিয়ান টেকনোলজি। এই কেন্দ্র থেকে আগামী ২০ বছর ১৩ টাকা ৯০ পয়সা করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো পাওয়ারের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড।

সুকুকটির ট্রাস্টি হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে যথাক্রমে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাজ করছে।

HTML tutorial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here