ক্যাসিনো কেও হার মানিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি হামিদ ফেব্রিকস। লোকসানে থেকেও ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। লভ্যাংশ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়া-কমায় কোন সীমা না থাকায় দর বেড়েছে ৬৭.২১ শতাংশ। ঐদিন কোম্পানিটির রেকর্ড পরিমান শেয়ার হাতবদল হয়েছে। রেকর্ড পরিমান শেয়ার হাতবদলের উদ্দেশ্য কি তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
মুলত উচ্চ প্রিমিয়ামে আইপিওতে এসে হতাশ করা হামিদ ফেব্রিকস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ হিসাববছরে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭২ পয়সা লোকসান দেওয়া এই কোম্পানি ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর এই ঘোষণার পর থেকেই পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে শুরু করেছে শেয়ারটি।
মাত্র ২ দিনে শেয়ারটির দাম বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। এই ধরনের ঘটনাকে বাজার বিশ্লেষকরা বাজারের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন। পাশাপাশি দুই কার্যদিবসের দরবাড়া নিয়ে ক্যাসিনো কোও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা। লোকসানী কোম্পানি নিয়ে এত বড় কারসাজির নেপথ্যেদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের পর থেকে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির মুনাফা নিম্নমুখী রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে বড় লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাটাগরি রক্ষায় নাম মাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। তার পরেও কোম্পানিটির শেয়ার দরের ব্যাপক উল্লম্ফনের নেপথ্যে কারসাজি রয়েছে। আর কারসাজি চক্রটি ইতিমধ্যে কয়েকটি বড় বড় কারসাজির ঘটনা ঘটিয়েছ। এদের বিচার না হওয়ার বেপরোয়া হয়ে গেছে। তাই, অতিদ্রুত কোম্পানিটির শেয়ার দরের এমন উল্লম্ফনের কারণ খুঁজে বের করা উচিত।
তথ্যবিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে শুধু মাত্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৬ টাকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে হামিদ ফেব্রিক্স। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকরা সমাপ্ত বছরে কোন লভ্যাংশ গ্রহণ করবে না।
সমাপ্ত বছরে শেয়ার সংখ্যার হিসাবে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৯ টাকা। এসময় শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ১.৭৬ টাকা। আগের বছরের একই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ০.৪২ টাকা। এদিকে, বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) কমেছে।
৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৭.৭৯ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৪০.০৪ টাকা। সমাপ্ত বছরে শেয়ার প্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.৩১ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ০.৬৬ টাকা। করোনার কারণ হঠাৎ করে কোম্পানিটির আয়, সম্পদ মূল্য ও নগদ অর্থ প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে বলে কোম্পানিটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়েছে।
ডিএসই’র ওয়েবসাইটে লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির সমাপনী বাজার দর ছিল ১৮.৩০ টাকা। লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রারম্ভিক দর ছিল ১৯.৩০। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬৭.২১ শতাংশ ১২.৩ টাকা বেড়ে সর্বশেষ ৩০.৬০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আজ রোববার
এদিন কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৩১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যা ২০১৮ সালের ১৪ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এদিন, কোম্পানিটির ১ কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৩টি শেয়ার ৩ হাজার ৮৯৭ বার হাতবদল হয়েছে। যা কোম্পানিটির বিগত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজ রোববার (৩১ অক্টোবর) ডিএসইতে শেয়ারটির দাম ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে। দুইদিনে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির সর্বমোট শেয়ারের ৫১.৫১ শতাংশ উদ্যোক্তা/পরিচালকদের নিকট। বাদবাকি শেয়ারের ৩১.৯৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ও ১৬.৫৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিটক রয়েছে। তবে হঠাৎ করে শেয়ার দরের এমন উল্লম্ফনের কারণ জানতে কোম্পানিটি সচিব এসএম মিজানুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।