সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটেগরির হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী হলেও সার্বিক বিচারে এ ধরনের শেয়ারের চাহিদা তলানিতে নেমেছে। বিনিয়োগকারীদের আর এসব কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ নেই। তারা ঝুঁকে পড়েছেন তুলনামূলক মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে। একে বাজারের জন্য শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বর্তমানে তাদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাতের শেয়ার। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত হিসেবে পরিচিত ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে তাদের এ খাতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। যে কারণে বাড়ছে এ খাতে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। গত সপ্তাহের বেশিরভাগ কার্যদিবসে বাড়তে দেখা গেছে খাতটির সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর।
এদিকে বিমা ও ওষুধ খাতের শেয়ারের চাহিদায় কয়েকদিন আগে ভাটা পড়লেও সম্প্রতি আবার এ খাতের বিনিয়োগ শুরু করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিরতির পর আবার বাড়তে শুরু করেছে খাত দুটির বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। এ কারণে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার চাহিদা কমে গেছে। ফলে নি¤œমুখী হতে শুরু করেছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর।
শেয়ারবাজারে বছরের সব সময় বেশিরভাগ ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য দেখা যায়। কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। বিশেষ করে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এসব কোম্পানির আধিপত্য বেশি থাকে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্তর থাকেÑতাদের কাছে দর বাড়ার বিষয়ে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর এসব কোম্পানির প্রতি নজরদারি বাড়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসই থেকে কয়েকটি কোম্পানির তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় ছিলÑইমাম বাটন, মেঘনা পিইটি, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, প্রাইম টেক্সটাইল, জুট স্পিনার্স, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, এপেক্স ফুডস, এইচআর টেক্সটাইল ও সমতা লেদারসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি। মূলত এরপর থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের বিনিয়োগে সচেতনতা বাড়ে বিনিয়োগকারীদের। এরপর মাঝে মধ্যে এসব শেয়ারের দৌরাত্ম্য থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদি (কিছু কোম্পানি বাদে) স্থায়ী হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের নজর থাকে স্বল্পমূলধনি
এবং ‘জেড’ ও কম শেয়ার রয়েছেÑএমন কোম্পানির দিকে। কারণ এসব কোম্পানি অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি নিয়ে গেম করতে পারে। আর তাদের ফাঁদে পা দেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে বিনিয়োগকারীরা এখন কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছেনÑএটা ভালো খবর। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে লাভের চেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকে।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কারণ ছাড়া যেসব শেয়ারদর বাড়ে এর বেশিরভাগ ‘জেড’ ক্যাটেগরির। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বেশিরভাগ সময় কারসাজির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এর বেশিরভাগের সঙ্গে কোম্পানির লোক জড়িত। ফায়দা নিয়ে তারা এসব শেয়ার ছেড়ে চলে যান। ঝামেলায় পড়তে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।